The Tempest Bangla Anubad Part-2
শুনলেন অশরীরী স্ত্রীর দুঃখ দুর্দশার কাহিনী। এবার যাদুবিদ্যাবলে পাইন গাছকে তিনি বিযুক্ত করে মুক্তি দিলেন। অশরীরী এরিয়েলের এই সব কথা মনে পড়ে প্রাণ- মন কৃতজ্ঞতায় ভরে উঠল। সে প্রস্পেরোর কাছে ক্ষমা চেয়ে বলল, আর কোনদিন সে অবাধ্য হবে না। আদেশ মেনে অনুগত হয়ে এখন থেকে তার সকল শক্তিকে কাজে লাগাবে। প্রস্পেরো অশরীরী এরিয়েলকে এবার আদেশ করেন, সমুদ্র পরীর রূপ ধারণ করে আমার কাছে চলে এস। তোমার রূপ আমি ছাড়া আর কারো কাছে কোনদিনই দৃষ্ট হবে না। আর মাত্র দু’দিন পরে তোমার মুক্তির ব্যবস্থা করবো।
এরিয়েল গেল স্বামীর আদেশ পালন করতে। আর প্রস্পেরো পরবর্তী কাজের পরিকল্পনা করেন। ক্যালিবান বন থেকে কাঠ সংগ্রহ করে , কাঠে আগুন জ্বালে আর ফাইফরমাশ খাটে। তার জন্ম হয় শয়তানের ঔরসে ও ডাইনী সাইকোেরাক্সের গর্ভে। ভাষা ওর বড় রুক্ষ। প্রস্পেরোর সঙ্গে সব সময়ই কথা কাটাকাটি চলে। ক্যালিবান তাকে অভিসম্পাত দেয়। এই দ্বীপটি তার মা সাইকোেরাক্স তাকে দিয়ে গেছে। প্রস্পেরো বলপূর্বক তা কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু দিয়েছে কত না আশা। প্রস্পেরো এই দ্বীপের রাজা আর ক্যালিবান তার প্রথম প্রজা। আজ সে কঠিন পাথরে বিদ্ধ ও বঞ্চিত এই দ্বীপের অবশিষ্ট অংশ থেকে।
ক্যালিবান প্রথমে প্রস্পেরোর আস্থানে সস্নেহে স্থান পেয়েছিল। পরে সে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল মিরান্দার পবিত্রতা নষ্ট করে এই দ্বীপ ক্যালিবানের বংশে ভরিয়ে তোলবার জন্য। প্রস্পেরো তাই তাকে মেরে আশ্রয় থেকে তাড়িয়ে দেন। প্রস্পেরো খুব চেষ্টা করেছিলেন ক্যালিবানকে মানুষ করে তুলতে। তিনি তাকে ভাষা শেখাতেন, সময় পেলেই বোঝাতে চেষ্টা করতেন কতসব ভাল কথা। কিন্তু তার নীচ বংশ, ফলে যা শিখলো তার খারাপ টুকুই সে গ্রহণ করলো। তাই তো বাধ্য হয়েই তাকে বন্দী করে রাখলেন পাহাড়ের মধ্যে অন্ধকার গুহায়। ভাষা শেখানোর জন্য সে প্রস্পেরোকে খুব করে গালি - গালাজ করে। তার প্লেগ হোক ইত্যাদি আরও কত অভিশাপ দেয়।
প্রস্পেরো তাকে রীতিমত ভয় দেখায় তার কথা না শুনলে পুরানো বাত রোগে একবারে পঙ্গু করে দেবে বলে। তার একঘেঁয়ে কাতরানিতে বনের বানর ও অন্য পশুরা পর্যন্ত সন্ত্রস্ত হয়ে উঠবে। এবার ক্যালিবান ভয়ে শিউরে ওঠে। ও প্রতি শ্রুতি দেয় যে আর কখনো অবাধ্য হবে না। তার বদ্ধমূল ধারণা প্রস্পেরোর যাদুবিদ্যা এতই শক্তিশালী যে, তার মায়ের গুরুদেব সেষ্টেসকেও তাঁর চাকর করে রাখতে পারেন। অসীম ক্ষমতা না থাকলে তা সম্ভব নয়। তাই ভয় করতেই হয়। এদিকে রাজকুমার ফার্দিনান্দ দ্বীপে দিন কাটাচ্ছে। একদিন দ্বীপের বালুকাবেলায় যখন রাজকুমার নিঃসঙ্গ অবস্থায় বসে আছে তখন জলপরীরূপী সন্দরী এরিয়েলের সমধর সঙ্গীত শুনতে পায়।
The Tempest Bangla Summary
সে ভাবে কোথা থেকে ভেসে আসছে এই সুমধুর সঙ্গীত। সে উঠে ধীরে ধীরে গানের স্বর অনুসরণ করে। পিতার মৃত্যুশোকে কাতর রাজকুমার ভুলে যায় সবকিছু। গানের স্বর যেন ক্রমে জলে গড়িয়ে গেল। সমুদ্রের বিক্ষোভ প্রকাশিত হয়ে গেল। এবার যেন গান ভেসে আসে আকাশ পথ থেকে। রাজকুমার ভাবে এই গান তার ডুবে যাওয়া পিতাকেই মনে করিয়ে দিচ্ছে। নিশ্চয়ই এ গান কোন জীবিতের নয় । অশরীরী আত্মার এটা। প্রস্পেরো আর মিরান্দা গুহার বাইরে দাঁড়িয়ে বিহ্বল দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। যার উদ্দেশ্যে এই সুন্দর গান বাতাসে ভেসে আসছিল তিনি সামনে দাঁড়িয়ে।
সে নতশিরে বলে, দেবী আমার প্রার্থনা পূর্ণ করুন। আপনি কি তবে এই দ্বীপের দেবী? যদি দেবীই হন তবে আমি এখানে কিভাবে চলবো তার উপযুক্ত নির্দেশ দিন। মনে কৌতূহল হয় জানতে, আপনি কি পার্থিব না অশরীরী? এবার মিরান্দা রাজকুমারের চোখ থেকে নিজের দৃষ্টি নামিয়ে নিয়ে বলল। আমি সামান্য এক নারী, মানবী মাত্র। রাজকুমার তখন আপন মনে বলল , হ্যা ঈশ্বর ! আমার ভাষা! এই ভাষায় যারা কথা বলে তাদের মধ্যে আমি নিজেকে সেরা বক্তা বলে মনে করি। আর যে দেশে এই ভাষা ব্যবহৃত হয়, সেই দেশেই আমার জন্ম। এবার প্রস্পেরো সামনে এগিয়ে এসে বলল, তুমি কোথায় থাকবে গো? একথা যদি নেপলসের রাজার কানে ওঠে, তবে? অশ্রুসজল চোখে তাকিয়ে ফার্দিনান্দ বলল, আমি একা। নিতান্তই একা। আপনার মুখে নেপলসের কথা শুনে আমি অবাকই হচ্ছি।
নেপলসের রাজা, তার ভাই , আর মিলানের ডিউক , তার দুই পুত্র , অমাত্য আর অপর পারিষদবর্গ সবাই এক সঙ্গে সলিল সমাধি লাভ করেছেন। আর আমি নেপলসের রাজার পুত্র। শুধু আমি একা আজ বেঁচে আছি । প্রস্পেরো গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, মিলানের ডিউক আর তার কন্যা তোমাকে চালনা করবে। অবশ্য যদি তুমি যোগ্য হও তবেই এটা সম্ভব। মিরান্দা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে – বাবা! নবাগতকে দেখছি তৃতীয় ব্যক্তিরূপে। আপনি কেন তাকে এরকম কটু ভাষায় বিদ্রূপ করছেন ? তা শুনে ফার্দিনান্দ বিনম্র চোখে মিরান্দার দিকে তাকিয়ে বলল, আপনি যদি অবিবাহিতা হন, যদি মন থেকে ভালবাসা না ফুরায়, আমি তবে আপনাকে নেপলসের রাণী করে দেব, কথা দিচ্ছি। প্রস্পেরো বলেন, কিন্তু একটা কথা। তুমি এখানে বিনা অধিকারে নিজের যা পরিচয় দিচ্ছ , আসলে তা তুমি নও। তুমি এ দ্বীপে এসেছো চররূপে । তুমি এসেছো আমার মেয়েকে আমার বুক থেকে ছিনিয়ে নিতে। এবার রাজকুমার ফার্দিনান্দ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে বলে, নেপলসের রাজকুমার মিথ্যা বলতে জানে না। আমার কথা বিশ্বাস করতে পারেন।
মিরান্দা তাকে বাধা দিয়ে বলে, এমন সুন্দর কান্তিতে কলঙ্ক তো থাকতে পারে না। আর অশুভ কোন শক্তিই আশ্রয় করতে পারে না এমন সুন্দর দেহে। আমি এরকমই বিশ্বাস করি। প্রস্পেরো এবার গম্ভীর হয়ে মিরান্দাকে আদেশ করলেন , তুমি আর এই যুবকের হয়ে সালিশী না করে বরং আমাকে অনুসরণ করো। বিশ্বাসঘাতকের শাস্তিস্বরূপ ওর গলা আর পা আমি একসঙ্গে করে লোহার শিকলে বাঁধবো। আর ওর খাদ্যের ব্যবস্থা হবে নদীর ঝিনুক, শিকড় আর পানীয় হবে সমুদ্রের নোনা জল। ফার্দিনান্দ হঠাৎ তার তরোয়াল কোষমুক্ত করে বলল, যতক্ষণ ধড়ে প্রাণ থাকবে আমি এইরকম অসৎ ব্যবহার প্রতিরোধ করবোই করব। তা শুনে মিরান্দা হঠাৎ দুজনের মাঝখানে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে কেঁদে বলল — বাবা, রাজকুমারকে এভাবে আপনি পরীক্ষা করবেন না। আমি নিশ্চিত জানি যুবক ভদ্র। গুপ্তচর মোটেই নয়।
এবার প্রস্পেরো ফার্দিনান্দ - এর উপর গর্জে উঠে বলে, তোমার তরোয়াল কোষবদ্ধ কর। বিশ্বাসঘাতক কোথাকার। শক্তির আস্ফালন করে মোটেই কিন্তু লাভ হবে না। আমার এই দণ্ডে আমি তোমাকে নিরস্ত্র করে দিতে পারি। মিরান্দা এবার পিতাকে অনুনয় করে বলে যে, নিজেই যুবকের জামিন থাকবে। ক্ষমা করা হোক তাকে। প্রস্পেরো এবার রাগতভাবে মিরান্দাকে বলে, একজন ভণ্ড যুবকের জন্যে তোমার কোন ওকালতিই আমি বরদাস্ত করছি না। তুমি ঐ চোখে একমাত্র পুরুষ দেখেছো ক্যালিবানকে। তাই তো তুমি ভাবছ দুনিয়ায় বুঝি এর চেয়ে সুন্দর কোন যুবকই আর নেই। বোকার মত তোমার ধারণা। ভুল, ভুল ধারণা। তার কথা মিরান্দা স্বীকার করে নিয়ে বলে, আমার ভালবাসা অতি সাধারণ, তাই অপর পুরুষের সৌন্দর্য - লালসা আমার মনে নেই। এবার প্রস্পেরো ফার্দিনান্দ -এর দিকে তাকিয়ে বলে, আমাকে অনুসরণ কর। তোমার স্নায়ুগুলো বর্তমান আবার বাল্যাবস্থায় ফিরে গেছে। তোমার যৌবনশক্তি লুপ্ত হয়ে গেছে আজ।
ফার্দিনান্দ দৃঢ় কণ্ঠে এবার বলে, হতে পারে! অসম্ভব নয়। তবে আমার উদ্যম আজও স্বপ্নের মত শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়েছে সত্য। আত্মীয় স্বজনের মৃত্যুর জন্যই আমার এ মানসিক দুর্বলতা। আপনার রক্তচক্ষুতে আমি মোটেই ভীত নই। তাই যদি ক্ষণিকের জন্যই কারাগারে এই নারীকে দেখতে পাই, তবে জগতে যারা মুক্ত তারা ভোগ করুক। এই কারাগারেই আমি মুক্তির স্বাদ উপভোগ করতে চাই। ফার্দিনান্দকে মিরান্দা বলল, তুমি জেনো, আমার পিতা যে অমানবিক আচরণ করেছেন তা অবশ্যই ক্ষণস্থায়ী। কিছুদিন পর অবশ্যই তার মত পাল্টীবে। অদূর ভবিষ্যতে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এসব নিয়ে মিছে ভেব না।
এদিকে দ্বীপের অন্যদিকে নেপলসো রাজা অ্যালেনসো তার ভাই সেবাস্তিয়ান অ্যান্টেনিও, গঞ্জালো আড্রিয়ান ও ফ্রান্সিসকো আলোচনায় মগ্ন। মর্মাহত রাজাকে নানাভাবে সান্ত্বনা দেওয়া হতে লাগল। দ্বীপে জীবন ধারণের উপযোগী সবই রয়েছে । কিন্তু আশ্চর্য! সবাই বলে এমন দুর্বিপাকে পড়েও আমাদের পোশাক পরিচ্ছদ এতটুকুও মলিন হয়নি। যেন আমাদের পোষাকগুলো আফ্রিকাতেরাজার পরমা সুন্দরী কন্যা ক্লরিবেনের সঙ্গে টিউনিসের রাজার বিবাহে যখন আমরা প্রথম পরেছিলাম, ঠিক সেই রকমই নতুন ঝকঝকে মনে হচ্ছে। এটা একটা সুখের ব্যাপার যে, ফিরতি পথে আমরা ভালই আছি।
রাজা অ্যালনাসো বললেন, এসব কথা আমার মনে সায় দেয় না। আগে বুঝলে আমি এমন জায়গায় আমার কন্যার বিয়ে দিতাম না। আমার ছেলেকে হারাতে হলো। আর কার্যতও মেয়েকে নির্বাসনই দেওয়া হয়েছে মনে করছি। তখন ফ্রান্সিসকো রাজাকে বলল, আমি যুবরাজকে তরঙ্গে ভাসতে দেখেছি। তিনি মাথা উঁচু করে তরঙ্গের ওপর ধরে রেখেছেন আর খুবই সাহসিকতার সঙ্গে সাঁতার কেটে তীরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন দেখলাম। সুতরাং তাই নিঃসন্দেহে বলতে পারি তিনি মরেন নি। রাজা ব্যপারটা অবিশ্বাস করায় রাজভ্রাতা সেবাঞ্চিায়ান তাকে এই ক্ষতির জন্য অভিযুক্ত করেন। নেপলসের রাজকন্যাকে একজন আফ্রিকাবাসীর কাছে নির্বাসন দেওয়া হল। এতে ইওরোপকে অবশ্যই সম্মানিত করা হয়নি। দুঃখটা ঐখানেই ক্লারিবেল অনিচ্ছা সত্ত্বেও পিতার স্নেহকে অবজ্ঞা না করার জন্যই এই বিয়েতে সম্মতি দিয়েছিলেন।
এবার কিন্তু রাজার মুখের দিকে চেয়ে রাজভ্রাতা সেবাস্তিয়ান এরকম বলার জন্য অনুতপ্ত হন। সবাই পরিশ্রান্ত। একসময় ডিউক অ্যাণ্টেনিও রাজভ্রাতা সেবাষ্টিায়ান ছাড়া সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। অ্যাণ্টেনিও এবার সেবাষ্টিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে— দেখুন, আপনার এখন কর্তব্য কি তা আপনার মাথায় রাজমুকুট উঠতে চলেছে। আমার এ কথাটাকে তুচ্ছজ্ঞান না করে বিশ্বাস করলে আপনার মর্যদা বাড়বে, কমবে না। তাই বলছি কি , আমায় মনে রাখবেন। তা শুনে সেবাষ্টিয়ান অ্যাণ্টেনিওকে বললেন — ডিউক, আপনার কথায় মনে হচ্ছে আমি ঘুমস্ত লোকের মত বুঝি স্বপ্ন দেখছি। এ কথায় অ্যাণ্টেনিও দ্বিগুণ উৎসাহিত হয়ে বলেন, আমার কথাটা হেসে উড়িয়ে দিচ্ছেন? নিজেই জানেন না কিভাবে মনের বাসনাটি পালন করছেন আপনি। জলে ডুবস্ত লোক এমনি করেই তীরের কাছাকাছি এসেও দূরে সরে যায়। কিন্তু কেন? আপন স্বভাবগত ভয়ে , হতাশায় বা অকর্মন্যতায় । বৃথাই রাজাকে স্তোকবাক্য শুনিয়ে আপনি সান্ত্বনা দিচ্ছেন যে , যুবরাজ ফার্দিনান্দ জীবিত। আপনি কি মনে করেন রাজকুমার জীবিত? এটা কি আপনি নিজে বিশ্বাস করেন? সেবাষ্টিয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন। ফার্দিনান্দ তবে বেঁচে নেই।
Answer ELN Privacy To be published, comments must be reviewed by the administrator
comment url